ডেভিড অনীল হালদারের দুর্নীতি, ধর্মীয় ভণ্ডামি ও নারী হয়রানির চাঞ্চল্যকর অভিযোগ


 ঢাকা, ১০ জুলাই ২০২৫ 

ডেভিড অনীল হালদার নামে এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের খ্রিস্টান সমাজে নিজেকে একজন ধর্মীয় ও সামাজিক নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কিন্তু তার কর্মকাণ্ডের পেছনে লুকিয়ে আছে অর্থ আত্মসাৎ, ধর্মীয় ভণ্ডামি, নারী হয়রানি ও সংস্থার তহবিল লুটের নানা অসাধু চক্রান্ত। গভীর অনুসন্ধানে তার এই অন্ধকার জগতের চাঞ্চল্যকর সব তথ্য উঠে এসেছে।

১. ধর্মীয় নেতার ভণ্ডামি: গির্জা এড়ানো, মদ্যপান ও নারী নিয়ে আড্ডা ।।

অনেকেই তাকে “খ্রিস্টান সমাজের নেতা” হিসেবে জানলেও, তার ধর্মীয় জীবনযাপন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

গির্জা এড়িয়ে চলা: ঢাকার বিভিন্ন গির্জার ধর্মযাজক ও সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনীল হালদার নিয়মিত গির্জায় প্রার্থনায় অংশ নেন না।

অনৈতিক জীবনযাপন: একাধিক সূত্রে জানা গেছে, তিনি মদ্যপান ও নারী নিয়ে অসামঞ্জস্য আচরণে জড়িত।

খ্রিস্টান নেতাদের প্রতিক্রিয়া: ঢাকার এক গির্জার পাদ্রী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ধর্মীয় নৈতিকতা মানে না, সে কীভাবে সমাজের নেতা হবার দাবি রাখে?”

২. এতিমখানার নামে বিদেশি তহবিল লুটপাট ।।

‘সমরিতান চিলড্রেন হোম, হেল্প বাংলাদেশ’ নামে সাভারস্থ একটি বালিকা এতিমখানা চালানোর দাবি করেন অনীল হালদার। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, এতিমদের সাহায্যের নামে বিদেশি অর্থ আত্মসাৎ করে তিনি ব্যক্তিগত সম্পদ গড়ে তুলেছেন।

  অভিযোগের উৎস:

এতিমখানার সাবেক কর্মকর্তারা বলছেন, বিদেশি দাতাদের কাছ থেকে আসা অর্থের সিংহভাগই এতিমদের জন্য ব্যয় হয়নি।

বরং এই টাকা দিয়ে তিনি ঢাকার বনানীতে বাড়ি কিনেছেন এবং অস্ট্রেলিয়ায় নাগরিকত্ব নেওয়ার প্রক্রিয়া চালিয়েছেন।

এক বিদেশি দাতার বক্তব্য: (নাম গোপন রেখে) “আমরা এতিম শিশুদের সাহায্য দিয়েছিলাম, কিন্তু পরে জানতে পারি টাকা তাদের কাছে পৌঁছায়নি।”

৩. নারী হয়রানি ও যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ ।।

‘‘সমরিতান’’ এতিমখানার সঙ্গে জড়িত নারীদের বিরুদ্ধে তার অনৈতিক আচরণের অভিযোগ রয়েছে।

নাবালিকা গর্ভবতী করার অভিযোগ:

সাবেক এতিমখানার এক কর্মী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেছেন, “অনেক মেয়ে এখান থেকে চলে গেছে, তবুও তিনি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন।”

স্থানীয় একটি মানবাধিকার সংগঠনের কাছে একাধিক মেয়ে অভিযোগ জানিয়েছে যে, তারা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন।

এক সাবেক এতিমের সাক্ষ্য: (পরিচয় গোপন) “আমি ১৬ বছর বয়সে এখানে ছিলাম, তিনি আমাকে বারবার অপ্রস্তুত অবস্থায় টাচ করতেন, সেক্স করতেন।”

৪. ‘বাংলাদেশ বাইবেল সোসাইটি’র তহবিল লোপাট ।।

তিনি বাংলাদেশ বাইবেল সোসাইটির সভাপতি ছিলেন। ওই সময় বাইবেল ছাপানোর তহবিল আত্মসাৎ করায় সংস্থার সদস্যদের সঙ্গে তার বিরোধ তীব্র হয়।

সদস্যদের প্রতিবাদ:

এক সদস্য (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেছেন, “তিনি টাকা তুলে নিয়ে গেছেন, কিন্তু বাইবেলের মুদ্রণ বন্ধ হয়ে যায়।” এ নিয়ে সংঘর্ষে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতও হতে হয়েছিল বলে জানা গেছে।

৫. সিসিডিব ‘র পতন: কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ ।।

তিনি খ্রিস্টান উন্নয়ন সংস্থা সিসিডিবি (CCDB)-র চেয়ারম্যান হিসেবে তিন মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন, যা নিয়মবহির্ভূত।

অর্থনৈতিক সংকট:

বিদেশি ফান্ড বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংস্থাটি এখন সংকটে।

অভিযোগ রয়েছে, তিনি কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

আইনি জটিলতা:

জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে সিসিডিবির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে।

সংবিধান লঙ্ঘন করে পরিচালনা পরিষদ গঠনেরও অভিযোগ রয়েছে।

৬. সরকারি ফান্ড ও ঘুষ বাণিজ্য ।।

সরকারি প্রকল্প পেতে ঘুষ দেওয়া এবং এনজিও ফান্ড সংগ্রহের নামে এতিমখানার মেয়েদের ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।

এক সিসিডিবি কর্মীর বক্তব্য: “তিনি প্রজেক্ট পেতে মেয়েদের দিয়ে দালালি বাণিজ্য করতেন এবং কমিশন নিতেন।”

৭. খ্রিস্টান সমাজের ক্ষোভ: “তাকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে”।।

অনীল হালদারের কর্মকাণ্ডে খ্রিস্টান সমাজের অনেকেই ক্ষুব্ধ।

এক ধর্মীয় নেতার বক্তব্য: “এমন ব্যক্তিকে কোনোভাবেই ক্ষমা করা যায় না। তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে।”

সুশীল সমাজের দাবি:

তার বিরুদ্ধে তদন্ত চালিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন।

আইনি পদক্ষেপ ও প্রতিক্রিয়া ।।

অনীল হালদারের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি অভিযোগ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজরে এসেছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে।

সিসিডিবি ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়নি।

শেষ কথা: দুর্নীতি ও ভণ্ডামির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সময় ।

ডেভিড অনীল হালদারের কার্যক্রম শুধু একটি সম্প্রদায়েরই নয়, দেশের আইন ও নৈতিকতার জন্য হুমকি। এ ধরনের অভিযোগের তদন্ত জরুরি, যাতে কোনোভাবেই অপরাধীরা পার পেয়ে না যায়।

নোট: এই রিপোর্ট বিভিন্ন সূত্র ও সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তৈরি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেলে তা পরবর্তীতে প্রকাশ করা হবে।

No comments

Post a Comment

© all rights reserved
made with by templateszoo